৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৩২

ব্রেকিং নিউজ

শিরোনাম

শুল্ক কমালেও হচ্ছে না চাল আমদানি, কমছে না দাম

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ
Print Friendly and PDF

অর্থনীতি ডেক্স:- 

সরকার শুল্ক কমিয়েছে, তারপরও চাল আমদানি করেছে না ব্যবসায়ীরা। গত ছয় মাসে এক কেজি চালও আমদানি করেনি ব্যবসায়ীরা। এমনকি সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি হয়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে চালের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে উঠতে পারে। সরকারের আশা করেছিল শুল্ক কমানোর পর চাল আমদানি করবে ব্যবসায়ীরা। তবে শোনা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করবে না। ফলে দাম কমানোর কোনো নিশ্চয়তাও পাওয়া যাচ্ছে না।

 

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সরকারিভাবে চাল আমদানি করে তা কম দামে বিক্রি করলে চালের বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে। তারা আরো বলেছেন, চালের দাম কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতে আমদানি শুল্ক কমানোর প্রহসন করেছে সরকার ।

 

গত বছরের শুরুর দিকে যখন বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, সেসময় তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি দাম কমানোর নির্দেশনা দেন। তখন মজুতকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানও চালায় তার মন্ত্রণালয়। এ বছরও জানুয়ারির শুরুতে আমনের ভরা মৌসুমে হঠাৎ চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা করে বাড়ায় সরকার চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি চালসহ তিনটি নিত্যপণ্য– ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক কমিয়েছে সরকার। বর্তমানে চাল আমদানিতে শুল্কও ভ্যাটসহ প্রায় ৬৩ শতাংশ কর দিতে হতো। নতুন আদেশে মোট ট্যাক্স ইনসিডেন্স (টিটিআই) কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্রমপুঞ্জিত আমদানি ( ১ জুলাই ২০২৩-০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) পর্ষন্ত কোন চাল আমদানি করা হয়নি। বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বেসরকারিভাবে মোট আমদানি ( ১জুলাই/২০২২ হতে ৩০ জুন/২০২৩) গত বছর জুন পর্ষন্ত ৪২১ দশমিক ৬২ হাজার মেন্ট্রিক টন। কিন্তু এ চলতি বছর একই সময় কোনো চাল আমদানি করেনি ব্যবসায়িরা। বর্তমানে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে চালের মজুদ রয়েছে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন।

 

বর্তমানে বর্তমানে বিশ্ববাজারে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক ছাড়ের পরও প্রতি কেজি চাল ৬০ টাকার বেশি হবে। সবচেয়ে কম দামের চালের আমদানি খরচ এখন প্রতি টন ৫৫০ মার্কিন ডলারের বেশি। এ চাল এনে দেশের বাজারে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে।

.

 

শুল্ক-কর ছাড় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দাম কমছে চালের। চাল আমদানিতে প্রতি কেজিতে শুল্ক কমবে সাড়ে ২৩ টাকা। তবু আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনোভাবে চাল আমদানি লাভজনক হবে না।

 

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ সুবিধা চাল আমদানিকারকেরা পাবেন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত। তবে এ সুবিধা পেতে আমদানির প্রতিটি চালানের বিপরীতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার লিখিত অনুমোদন লাগবে।

 

বগুড়ার চাল আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম বাংলা আউটলুককে বলেন, চাল কেউ আমদানি করছে না। তাহলে শুল্কছাড় দিয়ে লাভ কী? এমনকি শূন্য শুল্ক করে দিলেও এখন কেউ চাল আমদানি করবে না। কারণ বর্তমানে বিশ্ববাজারে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক ছাড়ের পরও প্রতি কেজি চাল ৬০ টাকার বেশি হবে। সবচেয়ে কম দামের চালের আমদানি খরচ এখন প্রতি টন ৫৫০ মার্কিন ডলারের বেশি। এ চাল এনে দেশের বাজারে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে।

 

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গির আলম খান বাংলা আউটলুককে বলেন দেশের ব্যবসায়ীরা সরকারের ৮৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ইচ্ছায় আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। ফলে সরকারের লোক দেখানো শুল্ক কমানো কোনো মানে হয় না ।

 

তিনি আরো বলেন, দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এখনই সরকার ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করে কম দামে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বিক্রি করতে হবে। সরকার সেটা না করে শুল্ক কমানোর প্রহসন করেছে।

 

রাজধানীর বাবুবাজার, মোহম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ও কারওয়ান বাজারের মতো বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট ও বিআর-২৮ কেজিতে বেড়েছে ছয় টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ টাকা থেকে ৭৪ টাকা এবং বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এসব বাজারে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়ে নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৮৮ ও গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা কেজি। পোলাওয়ের চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি, ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে এক হাজার টাকা।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে চালের উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮৯ লাখ টন। এর মধ্যে মানুষের খাদ্য বাবদ হয়েছে ২ কোটি ৫২ লাখ টন। এই হিসাবে, সে বছর উৎপাদনে উদ্বৃত্ত ছিল ১কোটি ৩০ লাখ টন। এমনকী পশুখাদ্য উৎপাদন, বীজ, চালকলে হওয়া অপচয়, গুদামে নষ্ট হওয়া ইত্যাদিসহ ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহ পরবর্তী সময়ের ক্ষতি বাদ দেওয়ার পরেও উদ্বৃত্ত ছিল ৩০ লাখ টন। বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২২-২৩অর্থবছরে চালের উৎপাদন আরও বেড়ে পৌঁছে যায় প্রায় ৩ কোটি ৯১ লাখ টনে। যা দেশেরপ্রধান খাদ্যশস্যের উদ্বৃত্ত বাড়ানোরই সহায়ক হয়। কিন্তু, তবু বাংলাদেশকে ১০ লাখ ৫৬ হাজারটন চাল আমদানি করতে হয়েছে। তথ্যের এই অসামঞ্জস্য শুধ ুচালের ক্ষেত্রেই নয়, বরং আলু, মাছ ও পোলট্রির মতোন অন্যান্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও দেখাযাচ্ছে।

Logo

<div class="fb-share-button" data-href="” data-layout=”button” data-size=”small”>